পকেট কম্পিউটার খ্যাত স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে দিন দিন। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে স্মার্টফোনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অনেক কাজ করা যাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে স্টক মার্কেট, ব্যাংকিং, ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণসহ নানা কাজ করছেন স্মার্টফোনের মাধ্যমে। ইন্টারনেট এবং মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক ফিচারের বৈচিত্র্যময় ব্যবহারে সত্যিকারের প্রয়োজনীয় ডিভাইস হয়ে উঠেছে স্মার্টফোন। তাই স্মার্টফোনের নিরাপত্তার বিষয়টি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোনের নিরাপত্তায় দরকারি কিছু টিপস নিয়ে আজকের প্রতিবেদন। লেখা সরকার মনোয়ার পাশা
নিরাপত্তায় পিন কোড : স্মার্টফোনের নিরাপত্তায় বিভিন্ন ধরনের পিন (পারসোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) থাকে। সিমে পিন কোড ব্যবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতিবারই ফোন চালুর সময় বা সিমটি ব্যবহার করতে পিন নম্বরটি প্রবেশ করাতে হবে। ফোনের ক্ষেত্রেও একটি নিরাপত্তা পিন ব্যবহার করা যায়। তাহলে সিমের মতো প্রতিবারই সেট চালু করার সময় পিনটি প্রবেশ করাতে হবে। অন্যথায় ফোনটি চালু হবে না। ফোন কিপ্যাড লক ও বিভিন্ন সেটিংস পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও পিন ব্যবহার করা যায়। ভয়েস মেইলের ক্ষেত্রে একটি ডিফল্ট পিন থাকে। এটি পরিবর্তন করে নতুন পিন ব্যবহার করা ভালো।
তথ্য সংরক্ষণে সতর্কতা : স্মার্টফোন এমনকি সাধারণ ফোনে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন পাসওয়ার্ড, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ করে রাখেন। সাধারণত মোবাইল ব্রাউজার ব্যবহারের সময় বারবার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড প্রবেশ করাকে অনেকে ঝামেলা মনে করেন। এ কারণে ব্যবহারকারীদের অনেকে ব্রাউজারে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করে রাখেন। এটা উচিত নয়। কারণ কোনো কারণে ফোনটি চুরি হলে আপনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দুষ্কৃতকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। অনেকেই আর্থিক প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় টেক্সট আকারে সংরক্ষণ করে রাখেন। এটাও নিরাপদ নয়। কোনো তথ্য সংরক্ষণ করতে গেলে পাসওয়ার্ড নির্ভর অ্যানক্রিপটেড ডাটাবেজে এগুলো সংরক্ষণ করা উচিত। এ ক্ষেত্রেও আপনার সহায়তার জন্য রয়েছে লাস্টপাস বা হ্যান্ডি সেফ প্রোর মতো চমকপ্রদ অ্যাপস। তবে এই বিশাল অ্যাপসের মধ্য থেকে সঠিক অ্যাপসটি খুঁজে পাওয়া দায়। অনেক অ্যাপসই রয়েছে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে নিতে পারে। এজন্য তৃতীয় পক্ষের অ্যাপস ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি। অ্যাপস ইনস্টলের ক্ষেত্রে জেইলব্রেক, রুট বা আনলক অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো ব্যবহারকারীকে শতভাগ নিরাপদ অ্যাপস ইনস্টলের সুবিধা দিয়ে থাকে।
ওয়াইফাই হটস্পটে সতর্কতা : ওয়াইফাই হটস্পটে প্রায় সবাই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে থাকেন। তবে এ বিষয়টি নিরাপত্তা জন্য হুমকি। কারণ ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় যে অপরিচিত রাউটারটি ব্যবহৃত হয় তার নিরাপত্তা সম্পর্কে ধারণা নাও থাকতে পারে। ওই রাউটারের মালিক তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর পাঠানো বিভিন্ন তথ্য নিজে ব্যবহার বা চুরি করছে কিনা সেটি প্রশ্ন সাপেক্ষ। যেমন ডবিস্নউপিএ২ নেটওয়ার্ক ছাড়া কোনো নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীর তথ্য যে কেউ চুরি করে নিতে পারবে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যদি ব্যবহারকারী অনলাইনে কোনো কেনাকাটা করেন, তাহলে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সব তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই পাবলিক হটস্পটে ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা ভালো, যা ব্যবহারকারীর নিজস্ব অ্যানক্রিপশন লেয়ার ব্যবহার নিশ্চিত করবে। এছাড়া বস্নুটুথ এবং জিপিএস ব্যবহারেরও সতর্ক থাকা ভালো।
সিস্টেম আপডেটেড : অপারেটিং সিস্টেম ছাড়াও প্রতিটি অ্যাপসই সাধারণত তাদের আপডেট ছাড়ে এবং সেটি ব্যবহারে ব্যবহারকারীদের সুযোগ দেয়। এসব আপডেট ফাইলে নতুন নতুন ফিচার থাকে, যা অ্যাপস বা অপারেটিং সিস্টেমের কিছুটা পরিবর্তন এনে দেয়। এতে একঘেয়েমি দূর হতে পারে। এছাড়া আপডেট ফাইলগুলোতে সিকিউরিটি ফিক্সের বিষয়গুলোও থাকে, যা স্মার্টফোনটিকে আরো নিরাপত্তা দেয়। তাই অপারেটিং সিস্টেম অথবা কোনো অ্যাপ্লিকেশনের আপডেট নোটিফিকেশন আসলে দেরি না করে সেটি আপডেট করা ভালো।
ট্র্যাকিং সেবা চালু : হারানো ফোন খুঁজে পেতে অসাধারণ একটি ফিচার ট্র্যাকিং সার্ভিস। প্রায় প্রতিটি ফোনে নিজস্ব অথবা থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ট্র্যাকিং সেবা পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ফোনটি কোথায় আছে সেটি ম্যাপের মাধ্যমে সহজেই দেখা যায়। এছাড়া ফোন ট্র্যাকার অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর স্মার্টফোনটিতে নির্দিষ্ট সিম বাদে অন্য কোনো সিম ব্যবহার করলে প্রকৃত ব্যবহারকারীর তা সহজে টের পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবহারকারীর দেয়া নির্দিষ্ট নম্বরে চালু করা নম্বরটি চলে আসে। ফলে ফোন চুরি হলে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ফোনটি চুরি হলে সিম বা ফোন কোম্পানির মাধ্যমে ফোন ও সিম লক করে দেয়া উচিত।
রিমোট ওয়াইপ : দেশে ফোন অহরহ ছিনতাই হচ্ছে। ছিনতাই, চুরি হওয়া ছাড়াও ফোন হারিয়েও যেতে পারে। অনেকে আবার যেকোনো রকম তথ্য ফোনে সেভ করে রাখে। কাজেই ফোনে পাসওয়ার্ড লক করার পরেও ফোনটি হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোনে সংরক্ষিত সব তথ্য মুছে ফেলতে হবে। আপনার স্মার্টফোনটি যদি আপনার অফিস থেকে দেওয়া হয় এক্ষেত্রে আইটি ডিপার্টমেন্ট মাইক্রোসফট এক্সচেঞ্জ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব তথ্য মুছে ফেলতে পারবে। আপনার ফোনটি যদি অ্যান্ড্রয়েড, বস্ন্যাকবেরি কিংবা উইন্ডোজ ফোন হয় তাহলে আপনি ভাগ্যবান! এক্ষেত্রে অনেক থার্ড-পার্টি অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে সহজে রিমোটলি সব তথ্য ফোন থেকে মুছে ফেলা যাবে। 'লকআউট মোবাইল সিকিউরিটি' এমনই একটি অ্যাপ্লিকেশন যার মাধ্যমে তথ্য রিমোটলি মুছে ফেলা ছাড়াও স্মার্টফোনটিকেও বিল্টইন জিপিএস-এর মাধ্যমে ট্র্যাক করা যাবে। আইফোনের ক্ষেত্রে 'মাবাইলমি' অ্যাপ্লিকেশনটি এনাবল করে নিতে হবে, তারপরে মোবাইলমি ব্যবহার করে অ্যাপলের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আইফোনটিকে ট্র্যাক করা যাবে কিংবা সমস্ত তথ্য রিমোটলি মুছে ফেলা যাবে। 'ফাইন্ড মাই ফোন' অ্যাপ্লিকেশনটিও অ্যাপল স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যেতে পারে। থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে তথ্য রিমোটলি মুছে ফেলা ছাড়াও স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার, ভাইরাস স্ক্যান করা যায়।
বস্নুটুথ ব্যবহার : অনেকে স্মার্টফোনের বস্নুটুথ সবসময় অন রাখেন। ব্যবহারকারীরা বস্নুটুথের মাধ্যমে একে অন্যের স্মার্টফোনে তথ্য আদান-প্রদান করেন। বস্নুটুথ কিন্তু সহজে হ্যাকারদের জন্য সিকিউরিটি হোল তৈরি করে দেয়। কাজেই বস্নুটুথ অফ করে রাখাই নিরাপদ, এছাড়া বস্নুটুথ অন থাকলে ফোনের ব্যাটারিও দ্রুত ডিসচার্জ হয়। যদি বস্নুটুথের সাহায্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়, তাহলে তথ্য প্রথমে অ্যানক্রিপ্ট করে তারপরে আদান-প্রদান করা যেতে পারে।
ফ্রি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন : যেকোনো ফ্রি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন কারণ এটি একটি ভাইরাসও হতে পারে কিংবা আপনার মোবাইলে একটি সিকিউরিটি হোল তৈরি করতে পারে। ইন্সটল করার আগে অবশ্যই দেখে নেওয়া উচিত অ্যাপ্লিকেশনটি কারা তৈরি করেছে, অ্যাপ্লিকেশনটির কী কাজ, রিভিউগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়া যেতে পারে, এছাড়া ইন্টারনেটে সার্চ করে বিস্তারিত জেনে নেয়া যেতে পারে।
Collection from: Hare
No comments:
Post a Comment